অবশেষে সেচ্ছাশ্রমেই যাতায়াতের ব্যবস্থা

বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২২
  • ২৭০ টাইম ভিউ

দুই গ্রাম ও আশেপাশের এলাকার প্রায় ১৫ হাজার মানুষের যাতায়াতের জন্য প্রয়োজন একটি সেতুর। এলাকার সাধারণ মানুষ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সেই দাবি করে আসছে দীর্ঘদিন। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া তারা আর কিছুই পায়নি। অবশেষে  দ্বারিকুশী-প্রতাপপুর রহিমের মোড় এলাকার ডাঙ্গা নদীতে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে প্রায় একশ ফুট দৈর্ঘ্য ও সাড়ে তিন ফুট প্রস্থবিশিষ্ট সাঁকো নির্মাণ করলেন নাটোরের বড়াইগ্রামের ওঐ দুই গ্রামের বাসিন্দারা।

এতে কেউ বাঁশ, কেউ টাকা আর কেউ দিয়েছেন শ্রম-এভাবেই সবাই মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ সাঁকো নির্মাণে বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের দ্বারিকুশী ও প্রতাপপুর ছাড়াও বড়াইগ্রাম ও জোনাইল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের চলাচলের পথ উন্মুক্ত হলো।

জানা যায়, দ্বারিকুশী ও প্রতাপপুরসহ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা এ পথে নিয়মিত চলাচল করেন। এ পথে শিক্ষার্থীরা প্রতাপপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ্বারিকুশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ্বারিকুশী হাফেজিয়া মাদরাসা, দ্বারিকুশী-প্রতাপপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায়।

কৃষাণ-কৃষাণীরা দ্বারিকুশী ও জোনাইল বাজারে বিভিন্ন পণ্য কেনাবেচা করতে যান। কিন্তু সেতু না থাকায় তারা বর্ষাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হন। এতে কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনে চরম ভোগান্তির শিকার হন তারা। জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও কাজ না হওয়ায় অবশেষে গ্রামের লোকজন নদী পারাপারের জন্য নিজেরাই বাঁশের সাঁকো নির্মাণের উদ্যোগ নেন।

শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় শতাধিক মানুষ নদীর পাড়ে জড়ো হয়েছেন। সাঁকো নির্মাণকে কেন্দ্র করে সেখানে যেন উৎসব চলছে। তাদের কেউ বাঁশ কাটছেন, কেউ বা তাল গাছের ফাড়াই করা কাঠের তক্তাগুলো চেঁছে সমান করছেন। আর কেউ পানিতে নেমে বাঁশের খুঁটির উপর তালের তক্তায় পেড়েক মেরে সাঁকো নির্মাণ করছেন। বয়স্করা বসে থেকে তাদেরকে উৎসাহ যোগাচ্ছেন। পাশে সবার জন্য চলছে রান্নার আয়োজন।

প্রতাপপুর গ্রামের দুলাল হোসেন জানান, ছেলে মেয়েরা নদীর ওপারের স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করে। নদী পারাপারে কখনো কলার ভেলা, কখনও পুরনো বাঁশের আড় ব্যবহার করতে হতো। এভাবে নদী পারাপারে অনেক সময়েই দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় থাকতে হয়েছে।

একই গ্রামের কামাল হোসেন জানান, সাঁকোটি নির্মাণে গ্রামের সবাই স্বেচ্ছায় যার যার সাধ্য অনুযায়ী চাঁদা দিয়েছেন। সবার সহযোগিতায় প্রায় ষাট হাজার টাকা খরচে বাঁশ, কাঠ, লোহাসহ অন্যান্য সামগ্রী কেনা হয়েছে। গ্রামের যুবকরা দুইদিন ধরে পরিশ্রম করে স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকোটি নির্মাণ করেছে।

দ্বারিকুশী গ্রামের মকছেদ প্রামাণিক বলেন, একটি সেতুর জন্য এলজিইডিসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও কাজ হয়নি। তাই সাঁকো নির্মাণ করে চলাচল ব্যবস্থা ঠিক রাখা হচ্ছে।

স্কুল শিক্ষক রেজাউল করিম জানান, বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ হওয়ায় এলাকাবাসীর চলাচলে সুবিধা হয়েছে। তবে স্থায়ীভাবে একটি সেতু নির্মাণের জন্য এলজিইডিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এই বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2019 SSB24.COM
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com